দোহারে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে

দোহারে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে

ঢাকার দোহার উপজেলায় নয়াবাড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবাধে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। দোহার  উপজেলা প্রশাসনের অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও থামছে না ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন।

দোহার উপজেলার নয়াবাড়ি ইউনিয়নের বাহ্রা হাবিল উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে যাওয়ার সড়কের সেতুর ওপর দিয়ে ড্রেজার মেশিনের পাইপ ক্রসিং করে নেয়া হয়েছে। ফলে এই সড়কটিতে চলাচলকারী যানবাহন ও পথচারীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

স্থানীয়রা এভাবে পাইপ বসানোর ফলে দুর্ভোগের শিকার হলেও এ ব্যবসার সাথে জড়িত প্রভাবশালীদের ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার নয়াবাড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীদের ড্রেজারের পাইপলাইন সড়কের ওপর ও নিচ দিয়ে জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

নয়াবাড়ি হাবিল উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বাজার এলাকা পর্যন্ত ৪টি ড্রেজার মেশিনের পাইপ রাস্তা ফুটো করে নেওয়া হয়েছে। ধোয়াইর বাজার থেকে পুরোনো গতি গাড়ি স্ট্যান্ড পর্যন্ত ৩টি ড্রেজারের পাইপলাইনের সংযোগ দেওয়া হয়েছে।নয়াবাড়ি ইউনিয়নের বাহ্রাঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা নদী থেকে বাল্কহেডের মাধ্যমে নদীর তীর থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাইপের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে বালু ফেলা হচ্ছে।

সেখানে ব্যবহৃত হচ্ছে ৮ থেকে ১০টি ড্রেজার মেশিন। এসব ড্রেজারগুলো যারা নিয়ন্ত্রণ করছেন তারা সবাই আওয়ামীলীগ ও তার বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। স্থানীয়রা এভাবে পাইপ বসানোর ফলে দুর্ভোগের শিকার হলেও এ ব্যবসার সাথে জড়িত প্রভাবশালীদের ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আরব আলী, নূরু ভূঁইয়া, লুৎফর মোল্লা, ছাত্রদল নেতা সেলিম রেজা, মোক্তার, ওয়াসিম রেজা, রহমান, যুবদল নেতা রিপন, কুসুমহাটি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও কুসুমহাটি ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি কালাম বিশ্বাস অবৈধভাবে সড়ক দিয়ে ড্রেজারের পাইপলাইন টেনে দীর্ঘদিন যাবৎ বালু ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।

নয়াবাড়ি ইউনিয়ন জুড়ে চলছে তাদের মতো অারও কয়েকজন বালু ব্যবসায়ীর দাপট। বালু ব্যবসায়ীরা কোনো ধরণের সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রধান প্রধান সড়কের ওপর ও নিচ দিয়ে ড্রেজারের পাইপ ঢোকিয়ে বালুর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে নির্বিঘ্নে। সড়কের নিচ দিয়ে পাইপ নেওয়ায় গত ১৬ ডিসেম্বর দোহার-নবাবগঞ্জ-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের আন্তা এলাকায় ঘটেছে সড়ক ধসের ঘটনা। এরপর ১৭ ডিসেম্বর নয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের প্রবেশের সড়কে ঘটেছে একই ঘটনা।

এ নিয়ে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।নয়াবাড়ি ইউনিয়নের প্রধান প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে ড্রেজারের পাইপ গ্রামের অলিগলির সড়ক পর্যন্ত সবস্থানে ছড়িয়ে আছে। কোথাও সড়কের ওপর দিয়ে আবার কোথাও সড়কের নিচ দিয়ে ড্রেজারের পাইপ নেয়া হয়েছে। সড়কের ওপরের পাইপগুলো এক থেকে দেড় ফুট উঁচু করে বসানো হয়েছে।

মাঝে মধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। এ নিয়ে প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না কারণ এসব বালু ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী। দোহারের পদ্মা নদীর দিকে তাকালে শুধু ড্রেজার আর পাইপ চোখে পড়বে। কোথাও কোথাও বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত করে পাইপ ঢোকানো হয়েছে।ঢাকা-১ আসনের সাংসদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান দোহার উপজেলাকে পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা করতে শত কোটি টাকার বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছেন।

তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সেই প্রকল্পের কাজ করে যাচ্ছেন। যে কারণে দোহার উপজেলায় ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা সম্পূর্ণ নিষেধ। কিন্তু কিছু অসাধু বালু খেকো প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে অবাধে তাদের ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কোটি টাকার প্রকল্প ভেস্তে যেতে পারে এবং নতুন করে এ এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিতে পারে।এ বিষয়ে নয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বালু ব্যবসায়ী আরব আলী’র সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, বাহ্রা হাবিল উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে যাওয়ার রাস্তার সেতুর ওপর দিয়ে যে ড্রেজার পাইপ নেওয়া হয়েছে সেটি আমার না।

আমরা ৫ জন মিলে একটি ড্রেজার দিয়ে বালু ব্যবসা করি। গত ৭ বছর আগে কুসুমহাটি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও কুসুমহাটি ইউনিয়নের সভাপতি কালাম বিশ্বাস রাস্তার নিচে ফুটো করে ড্রেজার পাইপ লাইন করেছে। আমরা সেই পাইপ লাইনটিই ব্যবহার করছি।এ বিষয়ে কুসুমহাটি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও কুসুমহাটি ইউনিয়নের সভাপতি কালাম বিশ্বাসের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, গত ১০-১৫ বছর আগে যখন কুসুমহাটির রাস্তা নির্মাণের কাজ হয় তখন আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাবু রথীন্দ্রনাথ দত্তের মৌখিক অনুমতি নিয়ে রাস্তার নিচ দিয়ে ড্রেজারের পাইপ লাইন সংযোগ নিয়ে ছিলাম। এখনও সেটি আছে। 

  নয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ায়ম্যান শামীম আহমেদ হান্নান বলেন, অবৈধ ড্রেজার ও রাস্তা ফুটো করে পাইপ ঢোকানোর বিষয়ে দোহার উপজেলা ও থানা প্রশাসনকে আমি অবহিত করেছি। তারা অতি শীঘ্রই ব্যবস্থা নিবে বলে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। দোহার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, এ বিষয়ে আমি অভিযোগ পেয়েছি। শীঘ্রই এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান পরিচালনা করা হবে। অবৈধ ড্রেজার ও বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন